1. mdbakiullahcox71@gmail.com : কক্স ২৪ : কক্স ২৪
  2. info@www.cox24.online : কক্স ২৪ :
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শহীদি রক্তের বদৌলতে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে আকসা মুসলমানদেরই থাকবেঃ মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।  ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে শহর জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল। কক্সবাজারে জমি নিয়ে সংঘর্ষ, জামায়াত নেতাসহ নিহত ৩। নতুন ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে শাসন কাঠামোর আমুল সংস্কার করতে হবেঃ নুর আহমদ আনোয়ারী। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মৃত্যুর ফাঁদ। ঈদের জামাতে আসিফ কেন আলাদা কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন, জানা গেল কারণ। আলো পোর ফাউন্ডেশন এন্ড ব্লাড ডোনেশন-এর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! আলো পোর ফাউন্ডেশর-এর পক্ষ থেকে প্রবাসে অবস্থানরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। প্রবাল সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। আজ ২৫তম রমযানের রাত্রি।আজ রাতেও হতে পারে শবে কদর। আমদানি করা কয়লায় মাটি, ফিরিয়ে দেওয়া হলো চালান। আলো পোর ফাউন্ডেশন এন্ড ব্লাড ডোনেশন এর উদ্যোগে মাদ্রাসার বাচ্চাদের নিয়ে ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পূর্ণ। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিকের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা জরুরীঃ সাংবাদিক কামাল হোসেন আজাদ চকরিয়া পৌরসভা ২নং ওয়ার্ড জামায়াতের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবেঃ শাহজাহান চৌধুরী। প্রবাসী ইউনিয়নের উদ্যোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ঈদ সামগ্রী বিতরণ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। শবে কদর বা লাইলাতুলকদরের ফজিলত,বিশেষ আমল ও লক্ষণ সমূহঃ মাওলানা ইয়াহিয়া পারভেজ। চকরিয়া পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ড জামায়াতের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হ্নীলা ইউনিয়ন শাখার ৮নং ওয়ার্ডের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। বদরের প্রান্তরে ইসলামের বিজয় বিশ্বব্যাপী ইসলাম চেতনা কে শাণিত করেছিলঃ নুর আহমদ আনোয়ারী। সাহারবিল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড ইমারত শাখার দোয়া ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। ধলঘাটা মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া পাঠাগারের ১২ তম মাহফিল সম্পন্ন। বাংলা ভিশন’ টিভিতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চকরিয়া পৌরসভার দায়িত্বশীল শিক্ষাশিবির সম্পন্ন। চকরিয়া পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল শিক্ষা শিবির সম্পন্ন। রোযা হচ্ছে জাহান্নামের ঢাল,এই ঢালকে অক্ষুণ্ণ রাখুনঃ মাওলানা ইয়াহিয়া পারভেজ। চকোরিয়া পুলেরছড়া দাখিল মাদরাসায় দুদিনব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা সম্পন্ন। রফিকুল উলুম ফাজিল মাদরাসায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন। জামায়াত নেতা আজহারের মুক্তির দাবীতে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ। সফল মুমিনের কয়েকটি গুণঃ মাওলানা বাকী বিল্লাহ। কোরক বিদ্যাপীঠে পাঁচদিনের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা উদ্বোধন। যে সাত শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। ছাইরাখালী প্রিমিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা এবং বিদায় অনুষ্ঠান। চকরিয়া আওয়ামী লীগের ১১ নেতা কর্মী আটক। শবে বরাতঃ ফজিলত পূর্ণ এক রাত। বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে শরে বারাতঃ মাওলানা ইয়াহিয়া পারভেজ। মোহাম্মদীয়া পাঠাগারের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধলঘাটা ইউনিয়ন শাখা দায়িত্বশীল সমাবেশ। দৈনিক পূর্বকোণের ৪০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের শুভেচ্ছা। চকরিয়া ভোজনবিলাসীদের জন্য নতুন সংযোজন ইটালিয়া রেস্টুরেন্ট।। কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিনকে কারাগারে প্রেরণ। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের পঞ্চমদিনে ড. মিজানুর রহমান আজহারি। ছাত্রলীগের নাশকতা ঠেকাতে চকোরিয়া বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল। কক্সবাজারে আমীর জামায়াত আগমন উপলক্ষে চকোরিয়া পৌর ব্যবসায়ীর উদ্যোগে প্রস্তুতি সভা চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের চতুর্থদিনে মুফতি আমির হামজা। মাওলানা মুমিনুল হক চৌধুরীর সহধর্মিনীর ইন্তেকালে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের শোক, জানাজা ও দাফন সম্পন্ন, কোরআনে বর্ণিত মুমিনদের সাত বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশে শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায় নি লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রজনী হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে টিকটক লাইভের সময় গুলিতে নিহত কোরআন পোড়ানো ইসলাম বিদ্বেষী আজকের হাদিস ভারতকে কোনো বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে না: বিজিবি মহাপরিচালক বিভাজিত হওয়ায় আমাদের শিক্ষা বিশ্বমানের হয়নি -মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সন্তানকে বাঁচাতে কিডনি দিবেন মা কক্সবাজার কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের চকরিয়ায় রেলওয়ের স্টেশনে স্টপেজ ও কাউন্টার চালুর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিলের ৩য় দিন। মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া পাঠাগারের ১২ তম মাহফিল এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক সরোয়ারকে জয়পুরহাটে বদলি সর্দি-কাশি কমাতে সারাদিন কতবার আদা পানি খাবেন? আমিরে জামায়াতের আগমনঃ চকরিয়া পৌরসভা ৭ নং ওয়ার্ডের প্রস্তুতি সভা আমিরে জামায়াতের আগমনঃ রামু উপজেলার প্রস্তুতি সভা ইয়োলো হোস্ট বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এবং নির্ভরযোগ্য ওয়েব হোস্টিং সেবা দাতা ইয়োলো হোস্ট বাংলাদেশের সেরা ওয়েব হোস্টিং সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান সম্প্রচার চকরিয়া পৌরশহরে জামায়াতে ইসলামী দাওয়াতী অভিযানে ব্যাপক সাড়া। গাজীপুরে মাওলানা রইস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজার ইসলামী ছাত্রসেনার উদ্যোগে মানববন্ধন। জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জামায়াতে ইসলামী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেঃ মোহাম্মদ শাহজাহান। চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ। আমি উন্মাদঃ মুহাম্মদ শওকত আলী। চকরিয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামের দাওয়াতি গণসংযোগ। চকরিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে পৌরসভা জামায়াত। চকরিয়া আইন শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক। হাজার টাকায় রক্ত পরিসঞ্চালন খরচ নির্ধারণের দাবি মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের। পেকুয়া উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।

বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে শরে বারাতঃ মাওলানা ইয়াহিয়া পারভেজ।

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২০১ বার পড়া হয়েছে

“বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে শরে বারাত।”
শবে বারাত নিয়ে আমাদের সমাজে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি দুটিই চলছে। বর্তমানে সমাজে আরো কছিু ভাই আছে যাদের কথা হল শবে বারাতের মর্যাদা বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এগুলো রাসূল সা. এর ইন্তেকালের অনেক পরে সূফীরা সৃষ্টি করেছেন!ফেইসবুকে আমার অনেক ভাই রয়েছেন, শবে বারাতকে ভিত্তিহীন প্রমাণিত করতে আধাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। আজকের এই লিখাতে বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে শবে বারাতের মর্যদা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.
মুয়াজ বিন জাবাল রা.থেকে বর্ণিত, রাসূল সা.বলেন- আল্লাহ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে সৃষ্টিকূলের দিকে রহমতের নজরে থাকান। মুশরি এবং বিদ্ধেষ পোষণকারী ব্যতিত সকলকে ক্ষমা করে দেন।[সহীহ ইবনে হিব্বান- ৫৬৬৫.শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত। আর রিসালাতুল আলাময়্যিাহ, প্রথম সংস্করণ. আল মু’যামুল আওসাত, ৬৭৭৬. দারুল হারামাইন, কাহেরা. আল মুযামুল কাবীর, ২১৫. মাকতাবাতুল উলূমি ওয়াল হিকাম, ২য় সঙস্করণ. শুয়াবুল ঈমান, ৩৮৩৩. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ]

® হাদীস সম্পর্কে ইমাম হাইছামী রহ. বলেন:
رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات
হাদীসটি ইমাম তাবারানী রহ.‘আল মুযামুল কাবীর’ এবং ‘আল মুযামুল আওসাত’ এ বর্ণনা করেন। বর্ণনা সকলেই ছিকাহ।[মাযমাউয যাওয়ায়িদ-১২৮৬০. দারুল ফিকর]

® হাদীসটি বর্ণনার পর ইমাম বায়হাকী রহ.বলেন-
و قد روينا هذا من وجه و في ذلك دلالة على أن للحديث أصلا من حديث مكحول
হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। এটা দালালাত করে , মাকহুল থেকে হাদীসের ভিত্তি রয়েছে।

® সহীহ ইবনে হিব্বানের মুহাক্কিক শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
حديث صحيح بشواهده.رجاله ثقات إلا أن فيه انقطاعا. مكحول لم يلق مالك بن يخامر.
হাদীসটি বিশুদ্ধ তার পক্ষে আরো অনেকগুরো হাদীস বর্ণিত হওয়ায়। বর্ণনাকারী সকলেই ছিকাহ। তবে সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। মাকহুল মালেক ইবনে উখামীর সাথে সাক্ষাত করেননি।
মাকহুল, মালেক ইবনে উখামীরের সাথে সাক্ষাৎ প্রমাণিত কিনা? সেটা শাস্ত্রীয় আলোচনা। এ ব্যাপারে ইমাম যাহাবী রহ. লিখিত ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা,৫/১৫৬ মাকহুলের জীবনি দেখা যেতে পারে।যদি সাক্ষাৎ প্রমাণিত নাও হয়, তারপরও শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ.বলেন-
و لولا ذلك لكان الإسناد حسنا , فإن رجاله موثوقون
যদি বাস্তবতা এমন হয়, তারপরও সনদ হাসান পর্যায়ের। কারণ বর্ণনাকারী সকলেই ছিকাহ।[সিলসিলাতুস সাহীহা, ১১৪৪]

শবে বারাতের মর্যাদা প্রমাণিত হওয়ার জন্য মুয়াজ বিন জাবালের একটি বিশুদ্ধ হাদীসই যথেষ্ট। কারণ একটি বিষয়ে যদি মাত্র একটি বিশুদ্ধ হাদীস পাওয়া যায়, সে বিষয়ের মর্যাদা প্রমাণিত হয়ে যায়। আর শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ বান্দাদের দিকে রহমতের নজরে থাকান এবং মুশরিক ও বিদ্ধেষপোষণকারী ব্যতিত সকলকে মাফ করে দেন, এ মর্মে আরো অকেগুলো হাদীস রয়েছে। নিম্নে আরো কয়েকটি উল্লেখ করছি।
عَنْ أَبِي بَكْرٍ ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا ، فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ مُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ لأَخِيهِ.
আবু বকর সিদ্দীক রা.থেকে বর্ণিত, রাসূল সা.বলেন- আল্লাহ তায়ালা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে সৃষ্টিকূলের দিকে রহমতের নজরে থাকান। মুশরিক এবং বিদ্ধেষপোষণকারী ব্যতিত সকলকে মাফ করে দেন।[মুসনাদুল বাযযার-৮০]

® বাযযার রহ.হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন-
وَهَذَا الْحَدِيثُ لاَ نَعْلَمُهُ يُرْوَى عَنْ أَبِي بَكْرٍ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ، وَقَدْ رُوِيَ عَنْ غَيْرِ أَبِي بَكْرٍ ، وَأَعْلَى مَنْ رَوَاهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَبُو بَكْرٍ وَإِنْ كَانَ فِي إِسْنَادِهِ شَيْءٌ فَجَلالَةُ أَبِي بَكْرٍ تُحَسِّنُهُ ، وَعَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ لَيْسَ بِمَعْرُوفٍ ، وَقَدْ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ أَهْلُ الْعِلْمِ وَنَقَلُوهُ وَاحْتَمَلُوهُ فَذَكَرْنَاهُ لِذَلِكَ
আমার জানা মতে আবু বকর রা.থেকে হাদীসটি এ সনদ ছাড়া অন্য কোন সনদে বর্ণিত হয়নি। আবু বকর ছাড়া আরো অনেক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। আবু বকর রা.এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের সনদে যদিও সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আবু বকর রা.এর ব্যক্তিত্বের কারণে হাদীসটি হাসান পর্যায়ের।

® ইমাম মুনযীরি রহঃ বলেন:
ورواه والبزار والبيهقي من حديث أبي بكر الصديق رضي الله عنه بنحوه بإسناد لا بأس به
আবু বকর রা.এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি ইমাম বাযযার এবং বায়হাকী বর্ণনা করেছেন এমন সনদে, যে সনদে কোন সমস্যা নেই।[আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪১৯০. দারূল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ]

® আহলে হাদিসের আলেম মাওলানা আবদুর রহমান মুবারকপুরীও ইমাম মুনযীরির বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন:
(وفي الباب عن أبي بكرالصديق) أخرجه البزار والبيهقي بإسناد لا بأس به كذا في الترغيب والترهيب للمنذري في باب الترهيب من التهاجر
[তুহফাতুল আহওয়াযী-৬/৪৬৬. মাকতাবাতুশ শামেলা]

ইমাম হাইছামী রহ.বলেন:
رواه البزار وفيه عبد الملك بن عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه وبقية رجاله ثقات
হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন আবদুল মালিক বিন আবদুল মালেক। ইবনে আবি হাতিম ‘আল জারহু ওয়াত তাদীল’ কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাকে দুর্বল বলেননি। এছাড়া বাকী বর্ণনাকারী সকলেই ছিকাহ।[মাযমাউয যাওয়ায়িদ-১২৯৫৭]

গ্রহণযোগ্য দুটি হাদীস উল্লেখ করলাম। এ মর্মে আরো অনেক হাদীস রয়েছে।

★শবে বরাতের রাতে একাকি ইবাদত করা রাসূল সা.থেকে প্রমাণিত।
শবে বরাত নিয়ে আমাদের সমাজে বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি উভয়টি হচ্ছে। শবে বরাতের কোনো ফজিলত নেই একথাও যেমন ভুল, তেমনভাবে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে অনেক ধরলের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। এর ভিত্ততে এ রাতে কোনো ধরণের ইবাদত করা রাসুল সা.থেকে প্রমাণিত বলাটাও অন্যায়। অথচ আমরা দেখি এ রাতে রাসূল সা.একাকি ইবাদত করেছেন।
১.আয়েশা রা. বর্ণনা করেন,
قام رسول الله صلى الله عليه و سلم من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت فلما رفع إلي رأسه من السجود و فرغ من صلاته قال : يا عائشة أو يا حميراء أظننت أن النبي قد خاس بك قلت : لا و الله يا رسول الله و لكنني ظننت أنك قبضت لطول سجودك فقال : أتدرين أي ليلة هذه ؟ قلت : الله و رسوله أعلم قال : هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز و جل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين و يرحم المسترحمين و يؤخر أهل الحقد كما هم
রাসূল সা.একদা রাতে জাগলেন এবং নামায পড়লেন। রাসূল সা.এত দীর্ঘ নামায পড়লেন যে, আমি ধারণা করলাম, তিনি মারা গেছেন। এ অবস্থা দেখে আমি দাঁড়িয়ে তাঁর আঙ্গুল নাড়া দিলাম। তখন তিনি নড়লেন। আমি ফিরে এলাম। রাসূল সা.যখন সিজদা থেকে মাথা তুললেন এবং নামায শেষ করলেন,তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি ধারণা করেছ যে, নবী করীম সা. তোমার থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আমি বললাম, না। আপনার সিজদার দীর্ঘতার কারণে আমি ধারণা করেছি যে আপনি মারা গেছেন। রাসূল সা. বললেন, তুমি কি জানো আজকে কোনো রাত্রি? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন, আজকে হলো শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। ক্ষমাপ্রার্থীদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। অনুগ্রহপ্রার্থীদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেন। তবে হিংসুকদের আল্লাহ মাফ করেননা। [শুআবুল ঈমান-৩৮৩৫]
হাদীসটি বর্ণনা করার পর ইমাম বায়হাকী রহ.বলেন,
هذا مرسل جيد و يحتمل أن يكون العلا بن الحارث أخذه من مكحول و الله أعلم
মুরসাল হলেও হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। আলা বিন হারিছ সরাসরি আয়েশা রা. থেকে শুনেননি। তিনি সম্ভবত মাকহুল থেকে শুনেছেন।

বায়হাকীর বর্ণনায় আয়েশা রা.থেকে বর্ণনা করেছেন আলা বিন হারিছ। ভিন্ন আরেক সনদে উরওয়া রহ. আয়েশা রা. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সে বর্ণনা হলো-
فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
এক রাতে রাসূল সা.কে আমি হারিয়ে ফেললাম। আমি খোঁজে বের হলাম। জান্নাতুল বাকীতে তাকে পেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি ভয় করেছো যে আল্লাহ তার রাসূল তোমার উপর অত্যাচার করেছেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ধারণা করেছি যে আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে এসেছেন! রাসূল সা.বললেন, আল্লাহ শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। [তিরমিযী-৭৩৯, শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত। ইবনে মাজা- ১৩৮৯, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত]

® ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন,
حديث عائشة لا نعرفه إلا من هذا الوجه من حديث الحجاج وسمعت محمدا يضعف هذا الحديث وقال يحيى بن أبي كثير لم يسمع من عروة و الحجاج بن أرطا لم يسمع من يحيى بن أبي كثير
হাজ্জাজের সনদ ছাড়া অন্য কোনো সনদে আয়েশা রা. এর হাদীস বর্ণিত হয়েছে বলে আমরা জানতে পারিনি। ইমাম বুখারী হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। তিনি বলেন, ইয়াহইয়া বিন আবু কাছীর উরওয়া থেকে শুনেননি। এমনভাবে হাজ্জাজ বিন আরতাতও ইয়াহইয়া বিন আবু কাছীর থেকে শুনেননি।

তিরমিযীর হাদীসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু এ হাদীস দ্বারা পূর্বোক্ত আলা বিন হারিছ এর হাদীসের প্রামাণিকতা শক্তিশালী হয়।
এমনভাবে আয়েশা রা. থেকে আনাছ বিন মালেক রা.ও বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা হলো-
بعثني النبي صلى الله عليه و سلم إلى منزل عائشة رضي الله عنها في حاجة فقلت لها أسرعي فإني تركت رسو الله صلى الله عليه و سلم يحدثهم عن ليلة النصف من شعبان فقالت يا أنيس اجلس حتى أحدثك بحديث ليلة النصف من شعبان وإن تلك الليلة كانت ليلتي من رسول الله صلى الله عليه و سلم فجاء النبي صلى الله عليه و سلم ودخل معي في لحافي فانتبهت من الليل فلم أجده فقمت فطفت في حجرات نسائه فلم أجده فقلت لعله ذهب إلى جاريته مارية القبطية فخرجت فمررت في المسجد فوقع رجلي عليه وهو ساجد وهو يقول سجد لك سوادي وخيالي وآمن بك فؤادي وهذه يدي جنيت بها على نفسي فيا عظيم هل يغفر الذنب العظيم إلا الرب العظيم فاغفر لي الذنب العظيم قالت ثم رفع رأسه وهو يقول اللهم هب لي قلبا تقيا نقيا من الشر بريا لا كافرا ولا شقيا ثم عاد وسجد وهو يقول أقول لك كما قال أخي داود عليه السلام أعفر وجهي في التراب لسيدي وحق لوجه سي أن تعفر الوجوه لوجهه ثم رفع رأسه فقلت بأبي وأمي أنت في واد وأنا في واد قال يا حميراء أما تعلمين أن هذه الليلة ليلة النصف من شعبان إن لله في هذه الليلة عتقاء من النار بقدر شعر غنم كلب قلت يا رسول الله وما بال شعر غنم كلب قال لم يكن في العرب قبيلة قوم أكبر غنما منهم لا أقول ستة نفر مدمن خمر ولا عاق لوالديه ولا مصر على زنا ولا مصارم ولا مصور ولا قتات
রাসূল সা.আমাকে বিশেষ প্রয়োজনে আয়েশার গৃহে প্রেরণ করলেন। আমি আয়েশাকে বললাম, দ্রুত যান। আমি রাসূল সা.রেখে এসেছি তিনি শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত বর্ণনা করছেন। তিনি বললেন, হে উনাইছ, তুমি বসো যাতে আমি শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত বর্ণনা করতে পারি। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে রাসূল সা.আমার গৃহে ছিলেন। রাতে হঠাৎ আমি জাগ্রত হলাম। কিন্তু রাসূল সা.কে পেলাম না। আমি তাকে অন্যান্য স্ত্রীদের গৃহে খুঁজলাম। কিন্তু তাকে পেলামনা। আমি বললাম, সম্ভবত তিনি তাঁর বাদী মারিয়া কিবতিয়ার কাছে গেছেন। এরপর আমি বের হয়ে মসজিদে গেলাম আমার পা তাকে স্পর্শ করলো। এমতাবস্থায় তিনি সিজদারত ছিলেন। রাসূল সা.তখন বলছিলেন: “আপনাকে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সিজদা করে। আমার অন্তর আপনার উপর ঈমান এনেছে। আমার হাত দ্বারা নিজের উপর অত্যাচার করেছি। আপনার মত মহানুভব ছাড়া কে আমাকে ক্ষমা করবে। আপনি আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন”। আয়েশা রা. বলেন, এরপর রাসূল সা.সিজদা থেকে মাথা তুললেন এবং বললেন,“হে আল্লাহ আপনি আমাকে অনিষ্ট এবং লৌকিকতা মুক্ত পূত পবিত্র কলব দান করুন। কাফের এবং অভাগাদের হৃদয়ের কলব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন”।এরপর রাসূল সা.পূণরায় সিজদা করলেন এবং এই দোয়া পড়লেন: “আমি আপনার নিকট ঐভাবে বলছি যেমনভাবে বলেছেন আমার ভাই দাউদ আ.। আমি আমার মালিকের জন্য চেহারাকে ধুলোয় ধুসরিত করছি। এরপর রাসূল সা.মাথা তুললেন। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আপনি এক উপাত্যকায়, আর আমি আরেক উপাত্যকায়। তিনি বললেন, হে হুমায়রা, তুমি কি জানো যে আজকের রাত শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। এই রাতে বনু কালব গোত্রের বকরীর পশম পরিমাণ জাহান্নামী লোককে আল্লাহ মুক্তি দান করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, বনী কালব গোত্রেব বকরীর পশমের হেতু কী? তিনি বললেন, আরবের গোত্রের মাঝে বনু কালবের বকরীর পশম সবচেয়ে বেশি। তবে ছয় প্রকারের লোকদের ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারছিনা। অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন কি না? সর্বদা মদপানকারী, পিতা মাতার অবাধ্য। বারবার যিনাকারী। সম্পর্ক ছিন্নকারী, ছবি অংকনকারী, চোখলগোর।[ফাযায়িলুল আওকাত, বায়হাকী-২৭, মাকতাবাতুল মানারাহ]

® হাদীসের সনদে ইবরাহীম বিন ইসহাক নামের একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। তিনি হলেন দুর্বল। এছাড়া সাঈদ বিন আবদুল কারীম আল ওয়াসীতী নামের আরেকজন বর্ণনাকারী রয়েছে। ইমাম আযদী তাকে ‘মাতরুক’ বলেছেন। ইমাম যাহাবী ‘মিজানুল এতেদাল’- এ তার জীবনীতে এ হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম যাহাবীর মূলনীতি হলো: যদি কোনো বর্ণনাকারীর কোনো মাতরুক বা বাতিল রেওয়ায়াত থাকে, তাহলে তিনি সেটা তার জীবনীর সাথে জুড়ে দেন। মোটকথা হলো, আনাছ রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিও দুর্বল।

আয়েশা রা. এর থেকে আবু সাইদ খুদরী রা.ও এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি ইমাম বায়হাকী ‘শুআবুল ঈমান’ এ উল্লেখ করেছেন। এখানে শুধু হাদীসের আরবী পাঠ উল্লেখ করছি।
عن أبي رهم أن أبا سعيد الخدري دخل على عائشة فقالت له عائشة يا أبا سعيد حدثني بشيء سمعته من رسول الله صلى الله عليه و سلم و أحدثك بما رأيته يصنع قال أبو سعيد كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا خرج إلى صلاة الصبح قال :اللهم املء سمعي نورا و بصري نورا و من بين يدي نورا و من خلفي نورا و عن يميني نورا و عن شمالي نورا و من فوقي نورا و من تحتي نورا و عظم لي النور برحمتك.. و في رواية محمد و أعظم لي نورا
قالت عائشة دخل علي رسول الله صلى الله عليه و سلم فوضع عنه ثوبيه ثم لم يستتم أن قام فلبسهما فأخذتني غيرة شديدة فظننت أنه يأتي بعض صويحباتي فخرجت اتبعه فأدركته بالبقيع بقيع الغرقد يستغفر للمؤمنين و المؤمنات و الشهداء فقلت بأبي و أمي أنت في حاجة ربك و أنا في حاجة الدنيا فانصرفت فدخلت حجرتي و لي نفس عال و لحقني رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال ما هذا النفس يا عائشة ؟ فقالت بأبي و أمي أتيتني فوضعت عنك ثوبيك ثم لم تستتم أن قمت فلبستهما فأخذتني غيرة شديدة ظننت أنك تأتي بعض صويحباتي حتى رأيتك بالبقيع تصنع ما تصنع قال :يا عائشة أكنت تخافين أن يحيف الله عليك و رسوله بل أتاني جبريل عليه السلام فقال هذه الليلة ليلة النصف من شعبان و لله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب لا ينظر الله فيها إلى مشرك و لا إلى مشاحن و لا إلى قاطع رحم و لا إلى مسبل و لا إلى عاق لوالديه و لا إلى مدمن خمر قال : ثم وضع عنه ثوبيه فقال لي يا عائشة تأذنين لي في قيام هذه الليلة فقلت : نعم بأبي و أمي فقام فسجد ليلا طويلا حتى ظننت أنه قبض فقمت التمسته و وضعت يدي على باطن قدميه فتحرك ففرحت و سمعته يقول في سجوده : أعوذ بعفوك من عقابك و أعوذ برضاك من سخطك و أعوذ بك منك جل وجهك لا أحصي ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك فلما أصبح ذكرتهن له فقال :
يا عائشة تعلمتهن ؟ فقلت :نعم فقال : تعلميهن و علميهن فإن جبريل عليه السلام علمنيهن و أمرني أن أرددهن في السجود
ইমাম বায়হাকী হাদীস বর্ণনার পর বলেন,
و هذا إسناد ضعيف و روى من وجه آخر
অর্থাৎ হাদীসটির সনদ দুর্বল। তবে হাদীসটি অন্য আরেকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে।[শুআবুল ঈমান-৩৮৩৭, সাইদ যাগলুল তাহকীককৃত]

আয়েশা রা.থেকে বিভিন্ন সনদে হাদীস থেকে একথা প্রমাণিত রয়েছে যে, শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত রয়েছে। সে রাতে আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। যে বিষয় দুটি মুয়ায রা. এর সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আমাদের দেশে ইদানীং কিছু ভাই বলে থাকেন যে, রাসূল সা.থেকে শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত প্রমাণিত রয়েছে। কিন্তু তাঁর থেকে সে রাতে কোনো আমল প্রমাণিত নয়।
তাদের এ কথাও সঠিক নয়। কেননা আয়েশা রা. এর রেওয়ায়াতে রাসূল সা.সে রাতের ইবাদত করার বর্ণিত হয়েছে। প্রথম রেওয়ায়াতকে ইমাম বায়হাকী মুরসাল হওয়া সত্তে¡ও গ্রহণযোগ্য বলেছেন।
এছাড়া সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, সে রাতে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দিকে তাকান। আর স্বাভাবিক কথা হলো: যে রাতে আল্লাহ রহমতের দৃষ্টি দিয়ে বান্দার দিকে তাকান, সে রাতে বান্দা আল্লাহর ইবাদত করবে। নামায পড়বে। তবে একাকী। এজন্য ইবাদত প্রমাণিত নয় কথাটি এক ধরণের হাস্যকর হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

★শবে বরাতের রোজা
শবে বরাত উপলক্ষে পরের দিন ১৫ তারিখ অনেকেই রোজা রাখেন। এমনিতে কেউ চাইলে মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখতে পারে। কেননা পনেরো তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেবে যদি কেউ ১৫ তারিখ রোজা রাখে, তাহলে সমস্যা নেই। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি রাহি. বলেন-
وأما صيام يوم النصف منه فغير منهي عنه، فإنه من جملة أيام البيض الغر المندوب إلى صيامها من كل شهر. وقد ورد الأمر بصيامه من شعبان بخصوصه،
শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখতে নিষেধ নেই। কারণ, ১৫ তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীজ’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর প্রত্যেক মাসের এ তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এছাড়া রাসুল সা.বিশেষ করে শাবান মাসে রোজা রাখতে বলেছেন। [লাতায়িফুল মাআরিফ পৃষ্ঠা নং, ১৮৯ দারুল হাদিস , কাহেরা।]

কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ ১৫ তারিখ রোজা রাখেন শবে বরাতের রোজা মনে করে। এ সংক্রান্ত ‘ইবনে মাজাহ’ এর একটি রেওয়ায়াত দলিলস্বরূপ পেশ করা হয়। আলি রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেন-
إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر
শাবান ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তোমরা নামাজ পড়ো এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা আল্লাহ সে রাতের সূর্যাস্তের সময় দুনিয়ার আসমনে অবতরণ করেন এবং বলেন, আছো কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। আছো কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তোমাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে সুবহে সাদিক উঁদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ডাকতে থাকেন।[ইবনে মাজা- ১৩৮৮]

শবে বরাতের সময় বেশিরভাগ মসজিদের মিম্বরে হাদিসটি উচ্চারিত হয়। আলি রা. এর সূত্রে বর্ণিত এ হাদিসের উপর ভিত্তি করে অনেকেই শবে বরাত উপলক্ষে রোজা রাখেন। এজন্য হাদিসটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরছি।
প্রথম কথা হলো, হাদিসটি সহিহ নয়। জয়িফ তথা দুর্বল। হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হলো ইবনে আবি সাবরা। তার নাম হলো, আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ বিন আবু সাবরা আল মাদানি। ইমাম জাহাবি রহ. তার ব্যাপারে বলেন
أبو بكر بن عبد الله بن أبي سبرة ضعفه البخاري وغيره وروى عبد الله وصالح ابنا أحمد عن أبيهما قال: كان يضع الحديث، وقال النسائي: متروك وقال ابن معين ليس حديثه بشيء” اه.
ইমাম বুখারি রহ.এবং অন্যান্যরা তাকে যয়িফ তথা দুর্বল বলেছেন। আবদুল্লাহ বিন আহমদ এবং সালেহ বিন আহমদ তাদের পিতা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সে হাদিস জাল করতো। ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহ. বলেন, তার বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।[মিযানুল এতেদাল : ৪/৪১৪]
এরপর ইমাম জাহাবি রহ. তার থেকে বর্ণিত মুনকার বর্ণনা সমূহের মাঝে এ হাদিস উল্লেখ করেছেন।

ইমাম ইবনে হিব্বান তার ব্যাপারে বলেন,
“كان ممن يروي الموضوعات عن الأثبات لا يحل كتابة حديثه ولا الاحتجاج به بحال، كان أحمد بن حنبل يكذبه”.
সে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী থেকে জাল হাদিস বর্ণনা করতো। তার সূত্রে বর্ণিত হাদিস লেখা জায়েজ নেই। কোনো অবস্থাতেই তার বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলীল দেওয়া যাবে না।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল তাকে মিথ্যুক বলেছেন।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি রহ. তার সম্পর্কে বলেন,
أبو بكر بن عبد الله بن محمد بن أبي سبرة بفتح المهملة وسكون الموحدة بن أبي رهم بن عبد العزى القرشي العامري المدني قيل اسمه عبد الله وقيل محمد وقد ينسب إلى جده رموه بالوضع وقال مصعب الزبيري: كان عالما من السابعة مات سنة اثنتين وستين ق.
তাকে হাদিস জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মুসআব বলেছেন, তিনি আলেম ছিলেন।[তাকরিবুত তাহজিব, তরজমা নং ৭৩১২]

আলী ইবনুল মাদিনি রহ. বলেন-
كان ضعيفا في الحديث
হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সে যয়ীফ তথা দুর্বল।
তিনি অন্যত্র বলেন-
كان منكر الحديث هو عندي مثل بن أبي يحيى
সে আপত্তিকর বর্ণনাকারী। আমার নিকট সে ইবনে আবি ইয়াহইয়া এর মতো।
ইমাম নাসাঈ বলেন-
متروك الحديث
সে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।
ইমাম ইবনে আদি রহ. বলেন-
عامة ما يرويه غير محفوظ وهو في جملة من يضع الحديث
তার অধিকাংশ বর্ণনা মাহফুয নয়। সে হাদিস জালকারীদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
ইমাম সাজী বলেন-
عنده منا كير
সে আপত্তিকর বর্ণনাকারী।
হাকেম আবু আবদুল্লাহ বলেন-
يروي الموضوعات عن الاثبات مثل هشام بن عروة وغيره
সে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী থেকে জাল হাদিস বর্ণনা করে। হিশাম ইবনে উরওয়া এবং অন্যদের মতো।[তাহজিবুত তাহজিব, ১২/৩২ দারুল ফিকর, বায়রুত, প্রথম সংস্করণ]

ইমাম ইবনে সাদ রহ. বলেন-
كان كثير الرحلة والسماع والرواية ولي قضاء مكة لزياد الحارثي وكان يفتي بالمدينة
হাদিস শুনা এবং বর্ণনা করার জন্য তিনি অনেক সফর করেছেন। তিনি মদীনায় ফতোয়া দিতেন।

ইমাম যাহাবি রহ. বলেন-
الفَقِيْهُ الكَبِيْرُ، قَاضِي العِرَاقِ، أَبُو بَكْرٍ بنُ عَبْدِ اللهِ بنِ مُحَمَّدِ بنِ أَبِي سَبْرَةَ بنِ أَبِي رُهْمٍ وَهُوَ ضَعِيْفُ الحَدِيْثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِه.
তিনি উঁচু মাপের ফকীহ ছিলেন। ইরাকের বিচারক ছিলেন। স্মৃতি শক্তির কারণে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল। [সিয়ারু আলামিন নুবালা-১৩/৩৭৪]
মোটকথা হলো- অধিকাংশ ইমামের মতে ইবনে আবি সাবরা হলেন মারাত্মক দুর্বল বর্ণনাকারী। কেউ কেউ থাকে হাদিস জালকারীও বলেছেন। এজন্য তার বর্ণিত এ হাদিস হলো চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্বল। আল্লামা ইবনুল জাওযী রহ. ‘আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ’ এর মধ্যে বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন-
هذا حديث لا يصح
বর্ণনাটি সহিহ নয়।[আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ-৩/৫৬১]

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আলী রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসের প্রথম অংশের ভাবার্থ আরও অনেক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের ফজিলত রাসুল সা.থেকে একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রোজার বিষয়টি শুধুমাত্র আলি রা. এর বর্ণনায় রয়েছে। আর এ হাদিসটি মুনকার।
১৫ তারিখ যেহেতু ‘আইয়্যামে বীজ’ এর অন্তর্ভূক্ত, এজন্য কেউ চাইলে সে হিসেবে সেদিন রোজা রাখতে পারে। যেমনটা বলেছেন আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ.। কিন্তু শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ রোজা প্রমাণিত নয়৷

★লা আহলে হাদিসদের কাছ গ্রহণযোগ্য ইমামদের দৃষ্টিতে শবে বরাত।
শবে বরাতের ফযীলত যেমনভাবে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, এমনভাবে উম্মতের বরেণ্য ইমামগণ এ রাতের মর্যাদাকে স্বীকার করেছেন। এখন কয়েকজন ইমামের বক্তব্য উল্লেখ করছি।
১.শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضل وكان في السلف من يصلي فيها لكن الاجتماع فيها لإحيائها في المساجد بدعة وكذلك الصلاة الألفية
শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত রয়েছে। সালাফের অনেকেই এ রাতে নামায পড়েছেন। কিন্তু সম্মিলিতভাবে মসজিদে সে রাত জাগা বেদয়াত। এমনভাবে জামাতে নামায পড়াও বেদয়াত।[আল ফাতাওয়াল কুবরা, ইবনে তাইমিয়া ১/৩০১]
® ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত্যু ৭২৭হি.) আরও বলেন,
ومن هذا الباب ليلة النصف من شعبان فقد روى في فضلها من الأحاديث المرفوعة والآثار ما يقتضي أنها ليلة مفضلة وأن من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها وصوم شهر شعبان قد جاءت فيه أحاديث صحيحة ومن العلماء من السلف من أهل المدينة وغيرهم من الخلف من أنكر فضلها وطعن في الأحاديث الواردة فيها كحديث إن الله يغفر فيها لأكثر من عدد شعر غنم بني كلب وقال لا فرق بينها وبين غيرها
لكن الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم من أصحابنا وغيرهم على تفضيلها وعليه يدل نص أحمد لتعدد الأحاديث الواردة فيها وما يصدق ذلك من الآثار السلفية وقد روى بعض فضائلها في المسانيد والسنن وإن كان قد وضع فيها أشياء أخر
শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সা.থেকে হাদীস এবং আরো অনেক আছার বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো দ্বারা এ রাতের ফযীলত প্রমাণিত হয়। সালাফের অনকেই এ রাতে বিশেষ করে নামায পড়তেন।

শাবান মাসের রোযা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে। সালাফদের থেকে মদীনার অনেক উলামায়ে কেরাম এবং পরবর্তী কেউ কেউ শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করেছেন এবং এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোর ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। বিশেষত বনু কালব গোত্রের বকরীর পশম পরিমাণ লোক ক্ষমা করে দেয়ার হাদীস। কিন্তু অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এবং আমাদের অনুসৃতদের মত হলো: এ রাতের ফযীলত রয়েছে। ইমাম আহমদ রহ. এর নস এ কথার দালালাত করে। কেননা এ রাতের ফযীলত বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে। সালাফ থেকে বর্ণিত আছার সেগুলোর সত্যায়ন করে। ‘মুসনাদ’ এবং ‘সুনান’ এর কিতাবাদিতে এ রাতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যদিও এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা জাল করা হয়েছে।[ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম-১/৩০২]

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট হলো। প্রথমত শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং আমাদের যে সমস্ত ভায়েরা বলে থাকেন যে, সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বরাতের ফযীলত প্রমাণিত নয়, ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য অনুসারে তাদের কথা সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত: সালাফের অনেকেই সে মর্যাদাপূর্ণ রাতে একাকী নামায পড়েছেন। তবে সম্মিলিতভাবে মসজিদে এক সাথে নামায আদায় করা বেদয়াত। কারণ রাসূল সা.এবং সাহাবাদের থেকে সম্মিলিতভাবে এমন আমল প্রমাণিত নয়। এজন্য আমাদের দেশে যারা মুতলাকভাবে বলে দেন যে, এ রাতে বিশেষ কোনো আমল নেই, ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য অনুসারে তাদের কথাও সঠিক নয়। কেননা সালাফরা এ রাতে একাকী নামায পড়েছেন।

২.. ইমাম ইবনে আমীর আল হাজ আসসানআনী মালেকী রহ. মৃত্যু ৭৩৭ হি. বলেন,
وَبِالْجُمْلَةِ فَهَذِهِ اللَّيْلَةُ ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ فَلَهَا فَضْلٌ عَظِيمٌ وَخَيْرٌ جَسِيمٌ وَكَانَ السَّلَفُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ يُعَظِّمُونَهَا وَيُشَمِّرُونَ لَهَا قَبْلَ إتْيَانِهَا فَمَا تَأْتِيهِمْ إلَّا وَهُمْ مُتَأَهِّبُونَ لِلِقَائِهَا ، وَالْقِيَامُ بِحُرْمَتِهَا عَلَى مَا قَدْ عُلِمَ مِنْ احْتِرَامِهِمْ لِلشَّعَائِرِ عَلَى مَا تَقَدَّمَ ذِكْرُهُ هَذَا هُوَ التَّعْظِيمُ الشَّرْعِيُّ لِهَذِهِ اللَّيْلَةِ ، ثُمَّ جَاءَ بَعْضُ هَؤُلَاءِ فَعَكَسُوا الْحَالَ كَمَا جَرَى مِنْهُمْ فِي غَيْرِهَا
শবে-বরাতের মর্যাদা যদিও শবে কদরের মত নয়, কিন্তু তারপরও সে রাতের অনেক মর্যাদা এবং কল্যাণ রয়েছে। সালাফরা এ রাতকে গুরুত্ব দিতেন এবং এ রাত আসার আগে অপেক্ষা করতেন। এ রাত আসলে তারা পুরো রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করতেন। এ রাতের বিশেষ ফযীলতের কারণে। এর পর কিছু লোক আসলো এর বিপরীত। তারা পূর্বের অবস্থাকে পাল্টিয়ে দিলো।[আল মাদখাল, ১/২৯৯]

৩. হাফেয ইবনুল কায়্যিম রহ.মৃত্যু ৭৫১হি. বলেন,
وقد صح وتقرر واتضح عند جميع أهل الديانة والسنة والجماعة من السلف الماضين. والصحابة والتابعين من الأئمة المهتدين الراشدين المشهورين إلى زماننا هذا أن جميع الآي الواردة عن الله تعالى في ذاته وصفاته والأخبار الصادقة الصادرة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم في الله وفي صفاته التي صححها أهل النقل. وقبلها النقاد الأثبات، يجب على المرء المسلم المؤمن الموفق الإيمان بكلاحد منه كما ورد
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, অনুসৃত ইমামগণ সহ সালাফের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকল ইমামগণের কাল বেয়ে আমাদের জামানা পর্যন্ত সকলের সহীহ এবং স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর যাত এবং সিফাত সম্পর্কিত সকল আয়াত, রাসূল সা.এর সকল সত্য সংবাদ, তার সিফাত সংক্রান্ত সে সব বর্ণনা যেগুলোকে শাস্ত্রবিদগণ সহীহ বলেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানের উপর সেগুলোর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।
এরপর আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
وجميع ما لفظ به المصطفى صلى الله عليه وسلم، من صفاته كغرسه جنته الفردوس بيده وشجرة طوبى بيده، وخط التوراة بيده والضحك والتعجب ووضعه القدم على النار فتقول قط قط. وذكر الأصابع والنزول كل ليلة إلى سماء الدنيا، وليلة الجمعة وليلة النصف من شعبان وليلة القدر.
এরপর তিনি কোনো কোন বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে, এ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূল সা.যা বলেছেন, সবগুলোর উপর ঈমান আনতে হবে।
এরপর তালিকায় বলেন, প্রত্যেক রাতে আল্লাহ আসমানে অবতরণ। জুমার রাতের ফযীলত। দুই ঈদের রাতের ফযীলত। শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত এবং শবে কদরের ফযীলতের উপর ঈমান আনতে হবে।[ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা নং, ৭৫-৭৬]

ইবনুল কায়্যিম রহ. হলেন ইবনে তাইমিয়া রহ.এর হাতেগড়া শিষ্য। আমাদের যে সমস্ত ভায়েরা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের ফযীলত রাসূল সা.থেকে সহীহভাবে প্রমাণিত নয়, তারা ইবনে তাইমিয়া এর মত ইবনুল কায়্যিম রহ. দ্বারাও বেশ কিছু মাসআলায় দলীল পেশ করেন। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম যে, ইবনুল কায়্যিম রহ. শবে বরাতের ফযীলতের উপর প্রত্যেক মুসলামানের ঈমান আনার কথা বলেছেন।

৪. আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি রহ. মৃত্যু:৭৯৫ বলেন,
وأما صيام يوم النصف منه فغير منهي عنه، فإنه من جملة أيام البيض الغر المندوب إلى صيامها من كل شهر. وقد ورد الأمر بصيامه من شعبان بخصوصه، ففي سنن ابن ماجه بإسناد ضعيف عن علي عن النبي صلى الله عليه وسلم ……
أنه يكره الاجتماع فيها في المساجد للصلاة والقصص والدعاء. ولا يكره أن يصلي الرجل فيها لخاصة نفسه. وهذا قول الأوزاعي إمام أهل الشام وفقيههم وعالمهم، وهذا هو الأقرب إن شاء الله تعالى………..
فينبغي للمؤمن أن يتفرغ في تلك الليلة لذكر الله تعالى، ودعائه بغفران الذنوب، وستر العيوب، وتفريج الكروب، وأن يقدم على ذلك التوبة، فإن الله تعالى يتوب فيها على من يتوب.
শাবান মাসের পনের তারিখ রোযা রাখতে সমস্যা নেই। কেননা পনের তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। প্রত্যেক মাসের সে তারিখে রোযা রাখা সুন্নাত। এছাড়া বিশেষ করে শাবান মাসে রোযা রাখার ব্যাপারে রাসূল সা.থেকে দুর্বল সনদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
এরপর তিনি শবে বরাতে রাত্রি জাগা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, কেউ কেউ নামাজ, কিসসা, কাহিনী বর্ণনা এবং দোয়ার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে মাকরুহ বলেছেন। তবে সে রাতে একাকী নামায পড়া মাকরুহ নয়। এমনটা হলো শামের ইমাম আওযায়ী এবং শামের অন্যান্য ফকীহ এবং আলেমদের মত। আমার মতে এ মত হলো বিশুদ্ধতার অধিক নিকটবর্তী।
এরপর এ রাতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করার পর লিখেন: মুমিনদের জন্য উচিৎ হলো, সে রাতে বেশি করে আল্লাহর জিকির করা। নিজের গোনাহের জন্য ক্ষমা চেয়ে , নিজের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার জন্য, বিপদে রাস্তা দেখানোর জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। তবে এগুলোর আগে তাওবা করা। কেননা এ রাতে তওবাকারীর তওবাকে আল্লাহ কবুল করেন।[লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা নং, ১৮৮-১৯০, দারুল হাদীস কাহেরা]

৫. আল্লামা আবদুল হাই লাখনোভী রহ. মৃত্যু:১৩০৪ হি.বলেন,
وفي الباب أحاديث أخر أخرجها البيهقي وغيره على ما بسطها ابن حجر المكي في الإيضاح والبيان دالة على أن النبي أكثر في تلك الليلة من العبادة والدعاء وزار القبور ودعا للأموات فيعلم بمجموع الأحاديث القولية والفعلية استحباب إكثار العبادة فيها فالرجل مخيربين الصلاة وبين غيرها من العبادات فإن اختار الصلاة فكمية أعداد الركعات وكيفيتها مفوضة إليه ما لم يأت بما منعه الشارع صراحة أو إشارة
শবে বরাতের ফযীলত সংক্রান্ত আরো হাদীস রয়েছে। যেগুলো ইমাম বায়হাকী সহ আরো অনেকে তাখরীজ করেছেন। ইবনে হাজার মাক্কী ‘আল ঈজাহ ওয়াল বায়ান’ নামক কিতাবে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল সা.সে রাতে বেশি করে ইবাদত করতেন। দোয়া করতেন। কবর জিয়ারত করতেন। মায়্যিতের জন্য দোয়া করতেন। এ সমস্ত হাদীস দ্বারা এ রাতে বেশি ইবাদত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।

ইবাদতের ক্ষেত্রে মানুষ ইচ্ছা স্বাধীন। চাইলে নামায পড়তে পারে। আবার অন্য ইবাদত ও করতে পারে। যদি নামায পড়ে, তাহলে রাকাত সংখ্যা এবং পদ্ধতি তার নিজের ইচ্ছাধীন। তবে স্পষ্ট বা ইশারাগতভাবে শরীয়তে নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নামাযে যোগ করতে পারবে না। অন্যথায় সে নামায জায়েয হবেনা। [আল আছারুল মারফুআ, পৃষ্ঠা নং ৬৭]

৬. ইমামুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. ১৩৫২ হি.বলেন,
هذه الليلة ليلة البراءة وصح الروايات في فضل ليلة البراءة وأما ما ذكر أرباب الكتب من الضعاف والمنكرات فلا أصل لها
এই রাত হলো বারাআত এর রাত্রি। এছাড়া শবে বরাতের ফযীলত সংক্রান্ত সহীহ হাদীস রয়েছে। এছাড়া কিতাবাদিতে যয়ীফ এবং মুনকার বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।[আল উরফুশ শাযী, তিরমিযীর সাথে সংযুক্ত-১/১৫২]

৭. মাওলানা আবদুর রহমান মুবারকপুরী রহ. ১৩৫৩ হি.বলেন,
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلاً،
শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীস বর্নিত হয়েছে। যেগুলোর সমষ্টি দ্বারা বুঝা যায় যে, এ রাতের ফযীলতের ভিত্তি রয়েছে।[তুহফাতুল আহওয়ায়ী, ৩/১৬১]

৮. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. ১৪২০হি.বলেন,
حديث صحيح ، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم معاذ
ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرة
و أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة .
و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منهاعددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقلهالشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” ( ص ১০৭ ) عن أهل التعديل
و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغيالاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل
التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله
تعالى هو الموفق .
শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ সৃষ্টির দিকে রহমতের দিকে তাকানো সংক্রান্ত হাদীস সহীহ। সাহাবাদের একটি জামাত থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনাকে শক্তিশালী করে।
এরপর সবগুলো হাদীস নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর বলেন, সবগুলো সনদ হিসাবে হাদীসটি সন্দেহাতীতভাবে সহীহ বা বিশুদ্ধ। এরচেয়ে কম সংখ্যায় হাদীস বর্ণিত হলে সেটা সহীহ হয়। যতক্ষণ হাদীসটি বেশি দুর্বল না হয়। এজন্য শায়খ কাসেমী রহ. ‘ইসলাহুল মাসাজিদ’ এ যে কথা বর্ণনা করেছেন: “ শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই” সেটা কথা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কেউ এমনটা বলে থাকেন, সেটা বলবেন তার কম মেহনত এবং তাড়াহুড়ার কারণে। [সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা-১১৪৪]
আমাদের দেশে যারা বলে বেড়াচ্ছেন যে, শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, মাওলানা আবদুর রহমান মুবারকপুরী এবং শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী তাদের মাথার তাজ। তারা দুইজন স্পষ্ট স্বীকার করেছেন যে, শবে বরাতের ফযীলত রাসূল সা.থেকে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত! আশা করি তারা সঠিক বিষয়টি অনুধাবন করবেন।
এখানে বিভিন্ন মাযহাবের এবং বিভিন্ন মতাদর্শের আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরলাম। তারা সকলেই শবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে যাকে আমরা শবে বরাত বলে থাকি, এর ফযীলতের কথা স্বীকার করেছেন। সকলেই বলেছেন যে, এ রাতে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। এজন্য মানুষ রাত জেগে একাকী নিভৃতে আল্লাহর ইবাদত করবে। তওবা করবে। রাসূল সা. একাকী সে রাতে ইবাদত করেছেন, এটাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া যুগ যুগ ধরে সমস্ত উম্মত সে রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এজন্য এ রাতের ফযীলত থাকা সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করার অর্থ হলো- রাসূল সা.থেকে বর্ণিত অনেকগুলো সহীহ হাদীস অস্বীকার করা। যদিও শবে বরাত উপলক্ষে অনেক রুসম এবং বানোয়াট আমল আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ, সেগুলোকে অস্বীকার করা যেতে পারে। সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করা যেতে পারে! কিন্তু সাধারণভাবে শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। কারণ এ সম্পর্কে রাসূল সা.থেকে অনেকগুলো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট