আমি উন্মাদ
মুহাম্মদ শওকত আলী।
কে বলে?
কলম প্রসব করতে জানেনা!
কলম প্রসব না করলে,
এই সভ্য পৃথিবীর জন্ম হতোনা।
হাজারো ধিক আমাকে,
কেনই বললাম সভ্য!
অশান্তির এই পৃথিবীকে!
মানবের আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত পৃথিবী,
হায়েনার নগ্ন থাবায় ক্ষত-বিক্ষত মানবতা,
রক্তাক্ত পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ,
তবুও কি আমি বলবো? সভ্য এই পৃথিবী!
হে আমি বলবো..
আমি উন্মাদ তাই
আমি উন্মাদ তাই।।
আমার কাছে আলোকিত দ্বি- প্রহর যেন –
আমবশ্যার অন্ধকার!
আমবশ্যার অন্ধকার যেন-
মেঘহীন নীলিমার প্রখর দুপুর।।
রাতের স্বপ্ন যেন বাস্তবতার প্রতিফলন,
দিনের জনজীবন যেন স্বপ্নময় মরীচিকা ;
বলতে পারো আমি উন্মাদ!
হে আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
পৃথিবীর সমস্ত সত্য আজ
মিথ্যা দিয়ে আবৃত,
অথচ মিথ্যে সব সত্যি বলে
চালিয়ে দেয়া হচ্ছে মানুষের কর্ণকুহরে।
তেলের জন্য যুদ্ধ অথচ বলা হচ্ছে
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযান!
নব্য হালাকু স্টাইলে ধ্বংস করা হলো
মানবসভ্যতার পাদপীঠ ইরাককে।
টুইনটাওয়ার হামলার মিথ্যা অভিযোগে,
ধ্বংস করা হলো আফগান নামক আরেক জাতিকে।
নিথর পৃথিবী, নিরুত্তর বিশ্ববিবেক-
সেখানে শোনা যায়না মানবাধিকারের শ্লোগান –
শান্তির আবরণে চলছে গ্রানাইট আর ক্লাস্টার,
পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণা হচ্ছে চৌচির,
সেখানে কিভাবে বাঁচবে!
যে শিশু..
মা বলে ডাকতে শেখেনি আজো।
এই চিত্র আমবশ্যা বা হেলির ধুমকেতুর মতো নয়।
চলছে প্রতিনিয়ত বিবেক বর্জিত বিশ্বশক্তির ইশারায়;
হিরোশিমা থেকে নাগাসাকি,
ভিয়েতনাম – ইরাক- আফগান হয়ে –
পৃথিবীর অসংখ্য জনপদে।
এখানে মাটি, ধুলো আর মানুষ্য রক্তমাংসের
খিচুড়ি হচ্ছে প্রতিদিন।
তবুও আমি বলবো সভ্য এই পৃথিবী!!
কেননা আমি উন্মাদ! আমি উন্মাদ তাই..
উন্মাদ না হলে ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে,
গুম,খুন চির অশান্তি অবশেষে।
সমগ্র পৃথিবী যেন আজ ভয়ংকর কারাগার ;
মানবতা, মানবাধিকার এখানে শুধুই হাহাকার।
নেই কোন স্বাধীনতা,নেই কোন অধিকার,
শৃঙ্খলিত বিবেক,স্বপ্ন আঁচড়ে পড়ছে বারংবার।
অপ্রতিরোধ্য ওরা,দুর্দমনীয় – দুর্বার…
তাদের হাতেই বিশ্ব ব্যবস্থা,
বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।
কারো সাধ্য নাই, শক্তি -হিম্মত নাই
তাদের রুখবার!
ওরা যা চাইবে, তা-ই হবে-
ওরা পারে জিরোকে হিরো,
আবার হিরো থেকে জিরো।
পারে ওরা-
চরিত্রহীনকে চরিত্রবান।
ওরা কারা?
তাদের পরিচয় কি?
ওরা বিশ্বশক্তি!
ওরা পরাশক্তি!
ওরা শান্তিরদুত;
ওরা সাম্রাজ্যবাদের আতংক,
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে
তাদের অভিযান,সংগ্রাম অবিরত।
তারা মানবতার বন্ধু,
মানবাধিকার সংরক্ষণের
অগ্র সৈনিক,
মানবতার দুর্যোগে,
দুর্ভোগে তারাই আগুয়ান।
তাদের এই পরিচয় আরো কি…
তখনই হয়তো কোন এক প্রতিবাদী ছাত্র -যুবক
চিৎকার দিয়ে বলে উঠবে..
থাম থাম থা…ম!
তখন আমার ঈষৎ হাসি পাই;
এই হাসি নয় অবজ্ঞার,
নয় তিরস্কার- অবহেলার।
এই হাসি-
নব উদ্দীপনার,
নতুন এক চেতনার,
এই হাসি নব উদয়মান
রবি শশীকে অভিনন্দনের,
নতুন এক বিপ্লবের ইঙ্গিতের।
এই হাসি
সময়ের গর্ভে ধারণকৃত যুদ্ধের বার্তা।
মায়ের কোলে ফুটফুটে নবজাতক দেখে
মা ভুলে যায় প্রসব বেদনা-
আজ পৃথিবীর মুখে হাসি,
নতুন এক বিপ্লবের প্রসব ঘটনায়।
আমি সেই বিপ্লবের জন্য অপেক্ষমান ছিলাম।
আমি সেই বিপ্লবের কথাই বলতে চেয়েছিলাম।
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে..
সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে.. শান্তির আবরণে মারণাস্ত্রের গন্ধ বের হবে।
তথাকথিত বিশ্ব মোড়লের পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবে।
আমি সেই বিপ্লবের কথাই বলে ছিলাম..
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে..
তেলের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হবে;
মানবতা পদদলিত হবেনা,
মানবাধিকার লঙ্গিত হবেনা।
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে.. অন্নহীন মানুষ অন্ন পাবে,
অনাহারী শিশুর মৃত্যুর অপেক্ষায় শকুন বসে থাকবেনা।
আমি সেই বিপ্লবের কথাই বলতে চেয়েছিলাম..
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে মানবতার আর্তচিৎকারে
পৃথিবীর বাতাস ভারি হবে না,
দুগ্ধজাত সন্তানহারা মায়ের করুন বিলাপ শোনা যাবে না।
ভাই হারা বোনের গগনচুম্বী
আওয়াজ আসবেনা।
আমি সেই বিপ্লবের কথাই বলে ছিলাম,
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে,
ইরাক,আফগান, চেচনিয়ায় শকুনের থাবায় রাজপথ রঞ্জিত হবে না।
ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরে নব্যসাম্রাজ্যবাদীরা রক্তের হোলিখেলা খেলতে পারবে না।
যে বিপ্লব সাধিত হলে পরে
জিনজিয়ান,মিন্দানাও আরাকান – সুরিনামেও
উড়বে শান্তির পতাকা।
পৃথিবী ফিরে পাবে মানবতা।
ফিরে পাবে যে অতীত তার ঐতিহ্যগাথা।
যে শাসন দেখিয়েছে খোলাফায়ে রাশেদা।
পৃথিবী মেতে উঠবে
মুক্তির মহা উৎসবে।
পৃথিবী আবার পরিনত
হবে, সুখী এক বিশ্ব পরিবারে।
আবদ্ধ হবে ভ্রাতৃত্বের এক মহাবন্ধনে..
আমি সেই সুন্দর পৃথিবীর কথাই বলেছিলাম..
বিদ্রোহী কবির সুরে-
আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে।
সকালের অপেক্ষায়
আর ঘুম নয়,
রাতের অন্ধকার চিড়ে জেগে ওঠো।
ভোরের অপেক্ষায়
আধো ঘুম, আধো জেগে নয়,
হায়েনারা মায়ের আঁচল
বোনের আঁচল ধরে
টান দিচ্ছে প্রতিনিয়ত!
বিবস্ত্র করে, লুন্ঠন করবে
আরো এক মায়ের ইজ্জত,
সম্ভ্রম হানি হবে –
আরো এক বোনের।
ওরে যুবক-
তোমার কি পড়েনা মনে?
হার্জেগোভিনার মুসলিম নারীদের চিৎকার সমস্বরে।
এক চোখা জাতিসংঘ চায়
খাদ্য রসদ পাঠাবে,
মুসলিম নারীরা চিৎকার করে বলে, খাদ্য চাই না তোদের,
বিষ দাও,
না হয় ঔষধ দাও গর্ভপাতের।
এই দৃশ্য কাশ্মীর-ইরাক-আফগানে,
চলছে..
আরাকান- মিন্দানাও – জিনজিয়ানে।
আরো অসংখ্য মুসলিম জনপদে।
সেই সময় বেশি নয় দূরে,
তোমার আমার
মায়ের আঁচল ধরে
বিবস্ত্র করে চক্ষুপানে,
হায়েনারা আবারো মেতে উঠবে,
ধর্ষণের সেঞ্চুরির মহা উৎসবে।
আমি নির্বাক,
আমি নিরুত্তর,
আমি আর পারছি না বলতে..
চিৎকার করে শুধু প্রশ্ন করতে পারো আমাকে!
এই জুলুমের কি নেই কোন শেষ?
নেই কোন বিচার?
নেই কোন প্রতিকার?
হে যুবক-
কে করবে বিচার?
অন্যায় জুলুমের হোতা যারা,
বিচারকের আসনেও তারা।
তাইতো আমি বলে দিতে চাই সেই বিপ্লবের বার্তা ;
ওরে বেহুশ
হয়না কেনো হুশ;
নজরুলের আর্তনাদ আজি,
চলে এসো সেই শমসের ধরি,
যে শমসের মোহাম্মদের চরনে
দিয়েছিলে ফেলি..
লোহিত সাগরে আরেকবার লালে লাল হয়ে মরি।।।
আমাদের নিরবতা -নিথরতা
তাইতো কবির আর্তনাদ আজি!
জেগে ওঠো, হে যুব শক্তি
আর নয় সময় ক্ষেপন,
সব হারিয়েছি,
নেই কোন হারাবার ভয়।
বাঁচি মরি লড়ে যাব
বীরের মতো অকুতোভয়।
আসবে না কেউ ফেরদৌস ছাড়ি
সেই শমসের ধরি,
বাচতে চাও, লড়তে হবে
আল্লাহ রসুলের নাম স্বরি।
আমি সেই বিপ্লবের কথাই বলে ছিলাম।
আমি উন্মাদ নয়
আমি উন্মাদ নয়।।