আল-আকসা, যা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামে পরিচিত। ইসলামে আল-আকসা একটি বিশেষ সম্মানিত ও পবিত্রতার সুবাস বহন করছে। জেরুজালেমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মসজিদ ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি, যা মসজিদুল হারামের পরে স্থাপিত দ্বিতীয় মসজিদ। মসজিদে আকসার গুরুত্ব ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার গভীরে নিহিত। এটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য তাৎপর্যের প্রতীক। ফিলিস্তিনের এই সংকটময় মুহূর্তে মসজিদে আকসা এটা কোন মসজিদ? সংক্ষিপ্তাকারে মসজিদে আকসার পরিচয় ও মর্যাদা এবং উল্লেখযোগ্য কিছু দিক ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
০১. দ্বিতীয় প্রাচীনতম মসজিদ:-
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الأَرْضِ أَوَّلُ؟ قَالَ الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ. قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ الْمَسْجِدُ الأَقْصى. قُلْتُ كَمْ بَيْنَهُمَا؟ قَالَ أَرْبَعُونَ سَنَةً.
আবু যর রা.বলেন, আমি বললাম,হে আল্লাহর রাসুল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ স্থাপিত হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোন মসজিদ? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। বললাম, এই দুইয়ের নির্মাণের মাঝে কত সময়ের ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর।[বুখারী-৩৩৬৬, মুসলিম-৫২০]
০২.মসজিদে আকসা ও তার আসে পাশে আল্লাহ বরকত রেখেছেন:-
سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَیْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِیْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنْ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْبَصِیْرُ٠
পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত,যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান। আসলে তিনিই সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা।
[সূরা বনী ইসরাঈল-১]
০৩.এই বাইতুল মকদস ইব্রাহিম ও লূত আ. এর দারুল হিজরত ও আশ্রয় স্থান:-
وَنَجَّیْنٰهُ وَ لُوْطًا اِلَى الْاَرْضِ الَّتِیْ بٰرَكْنَا فِیْهَا لِلْعٰلَمِیْنَ٠
আর আমি তাঁকে ও লূতকে বাঁচিয়ে এমন দেশের দিকে নিয়ে গেলাম যেখানে আমি দুনিয়াবাসীদের জন্য বরকত রেখেছিলাম।[আম্বিয়া-৭১]
০৪. এটি তৃতীয় মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ:-
এইতিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য সফর করা যাবেনা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم وَمَسْجِدِ الأَقْصَى.
আবূ হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত,তিনি নবী সা.হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, মসজিদুল হারাম, মসজিদুর রাসূল এবং মসজিদুল আকসা (বায়তুল মাকদিস) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে সালাতের উদ্দেশে হাওদা বাঁধা যাবে না (অর্থাৎ সফর করা যাবে না)।[বুখারী-১১৮৯,মুসলিম-১৩৯৭]
০৫.মুসলিমদের একসময়ের কেবলা:-
ইবনে আব্বাস রা.বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَهُوَ بِمَكَّةَ نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، وَالْكَعْبَةُ بَيْنَ يَدَيْهِ، وَبَعْدَ مَا هَاجَرَ إِلَى الْمَدِينَةِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا، ثُمَّ صُرِفَ إِلَى الْكَعْبَةِ.
রাসূল সা.মক্কায় কাবাকে সামনে রেখে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। মদীনায় হিজরতের পরও ষোলো মাস বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরেই নামায আদায় করেছেন। অতঃপর কেবলা কাবার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।[মুসনাদে আহমাদ-২৯৯১, আলমুজামুল কাবীর, তবারানী-১১০৬৬, মাজমাউয যাওয়ায়েদ-১৯৬৭]
® হযরত বারা ইবনে আযেব রা. বলেন, নবী সা.যখন প্রথম মদীনায় এলেন, তাঁর মামাদের বাড়িতে মেহমান হলেন। আর তিনি বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে ১৬ থেকে ১৭ মাস পর্যন্ত নামায আদায় করেছেন। তবে তিনি চাইতেন বাইতুল্লাহ যেন তাঁর কেবলা হয়।[বুখারী-৪০, মুসলিম-৫২৫]
০৬.ইসরা ও মেরাজের স্মৃতি বিজড়িত মসজিদ:-
মসজিদে আকসার গুরুত্ব বোঝার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, মেরাজ রজনীতে আমাদের নবীজী ঊর্ধ্বজগতের সফর শুরু করার পূর্বে জিবরীল আমীনের সাথে প্রথমে এই মসজিদে এসেছেন এবং নামায আদায় করেছেন। তিনি ইমামতি করেছেন আর সমস্ত নবীগণ তাঁর ইকতিদা করেছেন।
® আবু হুরায়রা রা.বলেন,রাসূল সা. বাইতুল মাকদিসের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন-
وقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ كَأَنَّه مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ -عَلَيْهِ السَّلاَمُ- قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِه شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ -عَلَيْهِ السَّلاَمُ- قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِه صَاحِبُكُمْ -يَعْنِي نَفْسَه- فَحَانَتِ الصَّلاَةُ فَأَمَمْتُهُمْ.
আর আমি নিজেকে আম্বিয়া আ.এর জামাতের মধ্যে দেখতে পেলাম। দেখি, মূসা আ.নামাযরত আছেন। তিনি ছিলেন ছিপছিপে ও দীর্ঘ দেহের অধিকারী। তাঁর চুল কোঁকড়ানো, যা ছিল কান পর্যন্ত ঝুলন্ত। দেখে মনে হবে, যেন ‘শানওয়া’ গোত্রেরই একজন লোক। ঈসা আ.কেও নামাযে দণ্ডায়মান দেখা গেল। তাঁর আকার আকৃতি সাহাবী উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী রা.এর সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। ইবরাহীম আ.কেও নামাযরত অবস্থায় দৃষ্টিগোচর হল। নবীজী বলেন, তাঁর দেহাবয়বের সাথে আমার দেহাবয়বের মিল বেশি। ইতিমধ্যে নামাযের সময় হয়ে গেল আর আমি তাঁদের সকলের ইমামতি করলাম। [মুসলিম-১৭২]
® একটি দীর্ঘ হাদীসের বর্ণনায় আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, রাসূলে কারীম সা.বলেছেন-
ثُمَّ دَخَلْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَجُمِعَ لِيَ الأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلاَمُ فَقَدَّمَنِي جِبْرِيلُ حَتى أَمَمْتُهُمْ.
অতঃপর আমি বাইতুল মাকদিসে প্রবেশ করলাম। সমস্ত নবীদেরকে একত্রিত করা হল। জিবরীল আমাকে সামনে এগিয়ে দিলেন আর আমি তাঁদের ইমামতি করলাম।[নাসায়ী-৪৪৯]
০৭.হাশরের ময়দান:-
বাইতুল মাকদিসের গুরুত্ব এখান থেকেও বোঝা যায় যে, কিয়ামতের দিন এটাই হবে হাশরের ময়দান। মাইমুনা রা.বলেন-
يَا رَسُولَ اللهِ، أَفْتِنَا فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ قَالَ: هُوَ أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَأَرْضُ الْمَنْشَرِ ائْتُوهُ فَصَلُّوا فِيهِ.
হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন এটা হবে হাশরের ময়দান। এখান থেকে মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে যাবে। তোমরা এখানে আসো এবং নামায আদায় করো।[মুসনাদে আবু ইয়ালা-৭০৮৮]
০৮. যিয়ারতকারীর জন্য বিশেষ দুআ:-
মসজিদে আকসার একটি বড় ফযীলত হল,সুলাইমান আ.এই মসজিদ যিয়ারতকারীর জন্য একটি বিশেষ দুআ করেছিলেন। আর স্বয়ং আমাদের নবী এই দুআ কবুল হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূলে সা. ইরশাদ করেন―
لَمَّا فَرَغَ سُلَيْمَانُ بْنُ دَاودَ مِنْ بِنَاءِ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سَأَلَ اللهَ ثَلاَثًا: حُكْمًا يُصَادِفُ حُكْمَه، وَمُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ بَعْدِه، وَأَلاَّ يَأْتِيَ هَذَا الْمَسْجِدَ أَحَدٌ، لاَ يُرِيدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ فِيهِ، إِلاَّ خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِه كَيَوْم وَلَدَتْهُ أُمُّه.
সুলাইমান ইবনে দাউদ আ.যখন বাইতুল মাকদিস নির্মাণ থেকে ফারেগ হলেন, আল্লাহর কাছে তিনটি দুআ করলেন-
১.তাঁর প্রতিটি ফায়সালা যেন আল্লাহর ফায়সালা মোতাবেক হয়।
২. তাকে যেন এত বড় রাজত্ব দেওয়া হয়, যা তাঁর পরে আর কাউকে দেওয়া হবে না।
৩. একমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি এই মসজিদে আগমন করবে, আল্লাহ্ যেন তাকে সেদিনের মতো নিষ্পাপ করে দেন, যেদিন তার মা তাকে জন্মদান করেছেন।
নবী সা.বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দুআ তো আল্লাহ কবুল করেছেন। আর আমি আশাবাদী আল্লাহ তাঁর তৃতীয় দুআও কবুল করেছেন।[নাসায়ী-৬৯২,ইবনে মাজা-১৪০৮]
০৯.এই মসজিদে নামাযের সওয়াব:-
হযরত আবুদ দারদা রা.বলেন,রাসূল সা. বলেন-
الصَّلَاةُ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ وَالصَّلَاةُ فِي مَسْجِدِي بِأَلْفِ صَلَاةٍ وَالصَّلَاةُ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ بِخَمْسِمِائَةِ صَلَاةٍ.
মসজিদে হারামের নামায এক লক্ষ নামাযের সমতুল্য। আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামায এক হাজার নামাযের সমতুল্য। আর বাইতুল মাকদিসের নামায পাঁচ শ নামাযের সমতুল্য।[মুসনাদে বাযযার-৪২২,শুআবুল ঈমান, বায়হাকী-৩৮৪৫]
১০. মসজিদে আকসার খেদমতে অংশগ্রহণ:-
মাইমুনা রা.হতে বর্নিত,রাসূল সা.বলেন-
قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَتَحَمَّلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: مَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَأْتِيَهُ فَلْيُهْدِ إِلَيْهِ زَيْتًا يُسْرَجُ فِيهِ، فَإِنَّ مَنْ أَهْدَى إِلَيْهِ زَيْتًا كَانَ كَمَنْ قَدْ أَتَاهُ.
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি সরাসরি বাইতুল মাকদিস যিয়ারত করতে সক্ষম না হবে, সে কী করবে?তিনি বললেন,যে ব্যক্তি এখানে আসার সামর্থ্য রাখবে না, সে যেন এখানের বাতি জ্বালানোর জন্য তেল হাদিয়া পাঠায়। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি তেল হাদিয়া পাঠাবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় সওয়াবের অধিকারী হবে, যে সরাসরি বাইতুল মাকদিস যিয়ারত করেছে।[মুসনাদে আবু ইয়ালা-৭০৮৮, মুসনাদে আহমাদ-২৭৬২৬]
১৭ হিজরীতে যখন বাইতুল মাকদিস মুসলমানদের হাতে এল তখন উমর রা. এই মসজিদে নামায পড়েছেন এবং নিজ হাতে ঝাড়ু দিয়েছেন।[মুসনাদে আহমাদ-২৬১]
১১. মসজিদে আকসা থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করা:-
হযরত উম্মে সালামাহ রা. বলেন, রাসূল সা.ইরশাদ করেন-
مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ غُفِرَ لَهُ .
যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিস থেকে ইহরাম বেঁধে উমরাহ করবে, তার গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।[ইবনে মাজা-৩০০১]
১২. বাইতুল মাকদিসের সান্নিধ্যে বসবাস:
আবু যার রা. বলেন,রাসূল সা.ইরশাদ করেন-
وَلَيُوشِكَنَّ أَنْ يَكُونَ لِلرَّجُلِ مِثْلُ شَطَنِ فَرَسِهِ مِنَ الْأَرْضِ حَيْثُ يَرَى مِنْهُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا جَمِيعًا.
অচিরেই এমন সময় আসবে, যখন কোনো ব্যক্তি যদি ঘোড়ার রশি পরিমাণ জায়গাও পেয়ে যায়, যেখান থেকে বাইতুল মাকদিস দেখা যায়, তাহলে এটা তার জন্য সমগ্র দুনিয়া থেকে বেশি উত্তম হবে।[মুসতাদরাকে হাকেম-৮৫৫৩, আলমুজামুল আওসাত, তবারানী- ৬৯৭৯, ৮২২৬]
১৩. বাইতুল মাকদিসে মৃত্যুর তামান্না:-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ أُرْسِلَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ فَلَمَّا جَاءَهُ صَكَّهُ فَرَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لاَ يُرِيدُ الْمَوْتَ. فَرَدَّ اللَّهُ عَلَيْهِ عَيْنَهُ وَقَالَ ارْجِعْ فَقُلْ لَهُ يَضَعُ يَدَهُ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ، فَلَهُ بِكُلِّ مَا غَطَّتْ بِهِ يَدُهُ بِكُلِّ شَعْرَةٍ سَنَةٌ. قَالَ أَىْ رَبِّ، ثُمَّ مَاذَا قَالَ ثُمَّ الْمَوْتُ. قَالَ فَالآنَ. فَسَأَلَ اللَّهَ أَنْ يُدْنِيَهُ مِنَ الأَرْضِ الْمُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ. قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” فَلَوْ كُنْتُ ثَمَّ لأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ إِلَى جَانِبِ الطَّرِيقِ عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمَرِ.
আবূ হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা আ.এর নিকট পাঠানো হল। তিনি তাঁর নিকট আসলে, মূসা আ.তাঁকে চপেটাঘাত করলেন। (যার ফলে তাঁর চোখ বেরিয়ে গেল।) তখন মালাকুল মাওত তাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ তাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করলেন, আবার গিয়ে তাঁকে বল, তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাঁর হাত রাখবেন, তখন তাঁর হাত যতটুকু আবৃত করবে, তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাঁকে এক বছর করে আয়ু দান করা হবে। মূসা আ.এ শুনে বললেন, হে আমার রব! অতঃপর কী হবে? আল্লাহ বললেন-অতঃপর মৃত্যু। মূসা আ.বললেন, তা হলে এখনই হোক। তখন তিনি একটি পাথর নিক্ষেপ করলে যতদূর যায় বাইতুল মাক্বদিসের ততটুকু নিকটবর্তী স্থানে তাঁকে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে নিবেদন করলেন। রসূল সা.বলেছেন-আমি সেখানে থাকলে অবশ্যই পথের পাশে লাল বালুর টিলার নিকটে তাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।[বুখারী-১৩৩৯,মুসলিম-২৩৭২]
এই হাদীসে পবিত্র ভূখণ্ড দ্বারা বাইতুল মাকদিস উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
১৪. আহলে হকের অবস্থানস্থল:
আবু উমামা বাহিলী রা.বলেন,রাসূলে সা. ইরশাদ করেন-
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الدِّينِ ظَاهِرِينَ لَعَدُوِّهِمْ قَاهِرِينَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ إِلَّا مَا أَصَابَهُمْ مِنْ لَأْوَاءَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَأَيْنَ هُمْ؟ قَالَ: بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ وَأَكْنَافِ بَيْتِ الْمَقْدِسِ.
আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সত্যের ওপর অবিচল থাকবে। তাদের দুশমনদের ওপর বিজয়ী থাকবে। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ আসবে আর তারা এভাবেই থেকে যাবে।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেসা করলেন, এই দলটির অবস্থান কোথায় হবে? তিনি বললেন,বাইতুল মাকদিস ও তার আশেপাশে।[মুসনাদে আহমাদ-২২৩২০; আলমুজামুল কাবীর,তবারানী-৭৬৪৩]
১৫. হক-বাতিলের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই:-
পৃথিবীতে মানব জাতির যাত্রালগ্ন থেকেই শুরু হয়েছে হক ও বাতিলের লড়াই, সত্য ও মিথ্যার সংঘাত। এটা অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে হক-বাতিলের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই হবে বাইতুল মাকদিস অঞ্চলে।
আবু হুরায়রা রা.বলেন,রাসূল সা.বলেন-
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ، فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ، فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ: يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي، فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ، إِلَّا الْغَرْقَدَ، فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ.
কিয়ামত কায়েম হবে না,যতক্ষণ না মুসলিমগণ ইহুদীদের সাথে লড়াই করবে আর মুসলিমগণ তাদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদীরা যে পাথর বা গাছের পেছনেই আত্মগোপন করবে,সে পাথর বা গাছও বলে উঠবে,হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এই যে আমার পেছনে ইহুদী আছে। এসো তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ গাছ কিছু বলবে না; কারণ এটা ইহুদীদের গাছ।[বুখারী-২৯২৬,
মুসলিম-২৯২২]
ইমাম নববী রাহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,’গারকাদ’ একধরনের কাঁটাদ্বার গাছ, যা বাইতুল মাকদিসে প্রচুর পরিমাণে হয়। আর সেখানেই দাজ্জাল ও ইহুদী বধের ঘটনা ঘটবে।[শরহে মুসলিম, নববী ১৮/৪৫]
উপরের আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, আলআকসা বা বাইতুল মাকদিস ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ আর মুসলিম উম্মার জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গোটা মুসলিম উম্মাহ আলআকসার বিষয়ে দায়িত্বহীনতার শিকার হয়ে পড়েছে।
★আজ পৃথিবীতে মুসলিম জাতি নির্যাতিত কেন?
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُوشِكُ الأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا. فَقَالَ قَائِلٌ وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ قَالَ بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهَنَ. فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْوَهَنُ قَالَ حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ.
সাওবান রা.থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সা.বলেছেন-খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্রিত হবে। এক ব্যক্তি বললো, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেন-তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের পক্ষ হতে আতঙ্ক দূর করে দিবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দিবেন। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আল-ওয়াহন’ কি? তিনি বললেন-দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।[আবু দাউদ-৪২৯৭]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلاًّ لاَ يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ. قَالَ أَبُو دَاوُدَ الإِخْبَارُ لِجَعْفَرٍ وَهَذَا لَفْظُهُ
ইবনু উমার রা.সূত্র থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছি যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।[আবু দাউদ-৩৪৬২]
ঈনাঃ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ধারে অধিক ক্রয়-বিক্রয় করা। যেমন কেউ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দশ টাকায় কিছু বিক্রি করলো এবং ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আট টাকায় কিনে নিলো।
★মুসলিম জাতি আজ গরিবদেরকে হীন দৃষ্টিতে দেখে অথচ আল্লাহ সেই গরিবদের জন্যই মুসলিম জাতিকে সাহায্য করবে।
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ ظَنَّ أَنَّ لَهُ فَضْلًا عَلَى مَنْ دُونَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا، بِدَعْوَتِهِمْ وَصَلَاتِهِمْ وَإِخْلَاصِهِمْ٠
মুসআব ইবন সাদ রহ.তাঁর পিতার মাধ্যমে বর্ণনা করেন-নবী সা.এর উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর চেয়ে নিম্নশ্রেণীর, তাঁদের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে। নবী সা.বলেছেন- আল্লাহ এ উম্মতকে সাহায্য করেন তার দুর্বলদের দ্বারা, তাদের দুআ, সালাত এবং ইখলাসের কারণে।[নাসায়ী-৩১৭৮]
আল্লাহ আমাদের মাফ করুন এবং আলআকসার মুক্তির জন্য আবারো জেগে ওঠার তাওফীক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।